"কোরবানির পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অর্থনৈতিক তাৎপর্য"
Content
তারিখ ২৭/০৫/২০২৫ কোরবানি কেবল ধর্মীয় পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং তা হলো বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক তৎপরতা, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির চাকায় আরো গতি সঞ্চার করে। ঈদুল আজহার পূর্বে কোরবানির পশু ক্রয় ও বিক্রয়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সৃষ্ট হয় ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, পশুখাদ্য, ওষুধ, পরিবহন, পশু চিকিৎসা, পশু শেড, পশুর জন্য সুপেয় পানি ইত্যাদি খাতে সৃষ্ট হয় নানা রকম কর্মসংস্থান। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখে কোরবানির পশু উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা। গত কয়েক বছর ধরে সরকার, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নানা উদ্যোগ ও অনুকূল নীতিমালার ফলে দেশেই কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে বড় অঙ্কের অর্থ, দেশ হয়ে উঠছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিবছরের মতো ৭ বছরের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কৃষক ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপকের যৌথ কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। ৭ বছরে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু ১ কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার। সরকারি ও বেসরকারি সূত্র অনুযায়ী এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ৫৬ লাখ ২ হাজার। এদের মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার গরু-মহিষ এবং বাকিগুলো ছাগল-ভেড়া। এর বাজার মূল্য আনুমানিক ৩০ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য পশু (ছাগল-ভেড়া) এর বাজার মূল্য আনুমানিক ১৫ হাজার কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মিলিয়ে কোরবানির পশু বিক্রি হতে পারে ৪৫ হাজার কোটি টাকার। শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশনে এবার শুরু ৫৬ লাখ ২ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ৩০ লাখ ৩৪ হাজার গরু-মহিষ। বছরজুড়ে নানা রকম উদ্যোগে খামারিরা এখন দেশি গরু-ছাগল ও ভেড়া উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। চামড়ার সংরক্ষণ দূর ভবিষ্যতে আরো স্বচ্ছন্দ্যের বিষয় হবে বলে বিশ্বাস। ২০টি ছাগল-ভেড়ার চামড়ার বাজার মূল্য ১০০ কোটি টাকা। চামড়া বিক্রেতারা জানিয়েছেন এবার গরুর চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় ৫% বেশি। তবে ঢাকায় এখনো অনেকে নিজ উদ্যোগে চামড়া সংরক্ষণ করছে। মোট চামড়ার প্রায় ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত হয়। চামড়াশিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম। আগের বছর থেকে দেশে তৈরি পোশাক ছাড়াও ‘হিডেন আইটেম’ হিসেবে পণ্য রপ্তানি চলছে। চামড়া সংরক্ষণের প্রধানতম বাধার সময় বিদ্যুৎ যাওয়ার সময়। তাই সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে চামড়া সংরক্ষণের জন্য ‘ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন’ তৈরি করেছে, যা চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রযোজ্য। দেশজুড়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা জোরদার করা গেলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পশুর বর্জ্য সংগ্রহ করে তা কৃষিতে কাজে লাগানো যায়। এতে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হবে, তেমনি জৈবসার উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে। অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি দূর করতে পারলে কোরবানি গরিবদের জন্য আরও স্বাচ্ছন্দের বিষয় হবে বলে বিশ্বাস।
Media Files
                                Posted On
May 27, 2025